বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। আগের কমিটির অছাত্র ও বিবাহিত নেতারাই এখনও সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বে থাকা চার জনই আবার সিটি করপোরেশনের কর্মচারী।
এই চার জন হলেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ও আতিকুল্লাহ মুনিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান ও কোনো পদে না থাকলেও অত্যন্ত সক্রিয় রইজ আহম্মেদ মান্না। ২০১৮ সালের মধ্যেই এদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে।
তাদের মধ্যে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স, আতিকুল্লাহ মুনিম অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি ও ব্রজমোহন কলেজ থেকে প্রাইভেট মাস্টার্স, রাজীব হোসেন খান সরকারি বরিশাল কলেজ থেকে অনার্স এবং রইজ আহম্মেদ মান্না ব্রজমোহন কলেজ থেকে অনার্স করেছেন।
২০১১ সালের ৯ জুলাই হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাতকে সভাপতি, আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক ও শামসুদ্দোহা আবিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি জেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির মেয়দ শেষ হওয়ার মাত্র ৩২ দিন আগে ২০১৪ সালের ৯ জুন গঠন করা হয় ১০৯ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর পর আর নতুন কমিটি হয়নি।
এই তিন জনের মধ্যে আবিদ ছাত্র রাজনীতি থেকে বেশ দূরেই রয়েছেন। তবে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরব থাকেন। তারাও অনেক আগেই বিয়ে করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী নিউজবাংলাকে জানান, শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর মহানগর আওয়ামী লীগের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর হাতে।
তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার নেতা সিটি করপোরেশনের মাস্টার রোলে চাকরি নেন।
চাকরি করলেও মেয়রের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে সাজ্জাদ, মুনিম, মান্না ও রাজীব নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগের রাজনীতি। এতে আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনটিতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা মূলত জানতাম না ছাত্রলীগের এই চার নেতা সিটি করপোরেশনের কর্মচারী। ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর নগরীর কলেজ এভিনিউ এলাকায় সাবেক এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি তৈরিতে ত্রুটির অভিযোগ এনে সিটি করপোরেশন তা উচ্ছেদে যায়।
তখন এই সাজ্জাদ, মুনিম, মান্না ও রাজীবও সিটি করপোরেশনের পক্ষে সেখানে উপস্থিত হন। পরবর্তী সময়ে মেয়র এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই চার জনকে সিটি করপোরেশনের স্টাফ বলে নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক, আতিকুল্লাহ মুনিম মহানগর ও বিএম কলেজ ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক, রইজ আহম্মেদ মহানগর ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক এবং রাজীব হোসেন খান জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক রাজনীতি করছেন।
মেয়রের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নানা সেক্টরেই এদের বেশ প্রভাব। তাই প্রকাশ্যে কেউই এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি নন।
সিটি করপোরেশনের চাকরির বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না নিশ্চিত করলেও তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সিটি করপোরেশনের কর্মচারী আবার কীভাবে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ করছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করবেন জানিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
মুনিম ও রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল ফোন রিসিভ হয়নি।
বরিশাল ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সংকট এবং সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এই চার নেতার বিষয়ে কোনো কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।